বাড়িতে আত্মীয় এলে, বাচ্চাদের কাছে ওনাদের প্রথম আবদার হয় — একটা ছড়া বলতো দেখি। আর বাচ্চাদের মজার ছড়ার কথা উঠলেই নাম করতে হয় সুকুমার রায়, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, অন্নদাশঙ্কর রায় এনাদের নাম না করলেই নয়।
তবে আজকাল চারিদিকে ইংলিশ মিডিয়ামের রমরমার জন্যে বাচ্চারা এসব কবির কবিতা ছাড়াই বড়ো হয়ে যায়। অথচ, এসব মজার কবিতায় যে মাটির ছিল, সাহিত্যিক পরিপূর্ণতা ছিল, তা হয়তো তারা জানতেও পারবে না।
তাই আসুন, আজ আমরা এরকম কিছু দারুন মজার ছোটদের কবিতা ফিরে দেখি। বাড়িতে ছোট বাচ্চা থাকলে, অবশ্যই ওদের এই ছড়া ও কবিতা আবৃত্তি করবেন। যতই হোক, আমরা বাঙালি; আর বাঙালি বলেই আজ গোটা বিশ্বে আমাদের জায়গাটা অন্যদের থেকে একটু ওপরে। সেখানে, স্ট্যাটাস মেন্টেন করতে গিয়ে, বা চাকুরী-ভিত্তিক শিক্ষার ইঁদুর দৌড়ে বাংলা থেকে যেন আমরা আমাদের ছোট ছোট বাচাদের বিচ্ছিন্ন না করে ফেলি।
যাচ্ছ কোথা ? চাংড়িপোতা
কীসের জন্য ? নেমম্ভন্ন।
বিয়ের বুঝি ? না, বাবুজি I
কীসের তবে ? ভজন হবে I
শুধুই ভজন ? প্রসাদ ভোজন I
কেমন প্রসাদ ? যা খেতে সাধ I
কী খেতে চাও ? ছানার পােলাও।
ইচ্ছে কী আর ? সরপুরিয়ার I
আঃ কী আয়েস ৷ রাবড়ি পায়েস
এই কেবলি ? ক্ষীর কদলী I
বাহ কী ফলার। সবরি কলার I
এবার থামাে I ফজলি আমও I
আমিও যাই ? না, মশইি
Jaccho kotha? Changripota.
Kisher jonno? Nemontonno.
Biyer bujhi? Na babuji.
Kisher tobe? Bhajan hobe.
Sudhui bhajan? Proshad bhojan.
Kemon proshad? Ja khete shadh.
Ki khete chao? Chanar polao.
Icche ki ar? Shorpuriar.
Ah ki aayesh. Rabri payesh.
Ei keboli? Khir kodoli.
Bah ki folar. Shobri kolar.
Ebar thamo. Fazli aamo.
Amio jai? Na moshai.
দিনের আলো নিবে এল সুয্যি ডোবে ডোবে ।
আকাশ ঘিরে মেঘ জুটেছে চাঁদের লোভে লোভে ।
মেঘের উপর মেঘ করেছে, রঙের উপর রঙ ।
মন্দিরেতে কাঁসর ঘন্টা বাজল ঠং ঠং ।
ও পারেতে বৃষ্টি এল, ঝাপসা গাছপালা ।
এ পারেতে মেঘের মাথায় একশো মানিক জ্বালা ।
বাদলা হাওয়ায় মনে পরে ছেলেবেলার গান–
বৃষ্টি পরে টাপুর টুপুর, নদে এল বান ।।
আকাশ জুড়ে মেঘের খেলা, কোথায় বা সীমানা–
দেশে দেশে খেলে বেড়ায়, কেউ করে না মানা ।
কত নতুন ফুলের বনে বৃষ্টি দিয়ে যায়,
পলে পলে নতুন কেহ্লা কোথায় ভেবে পায়!
মেঘের খেলা দেখে কত খেলা পড়ে মনে,
কত দিনের লুকোচুরি কত ঘরের কোণে!
তারি সঙ্গে মনে পরে ছেলেবেলার গান–
বিষ্টি পরে টাপুর টুপুর, নদে এল বান ।।
মনে পরে ঘরটি আলো, মায়ের হাসিমুখ–
মনে পরে মেঘের ডাকে গুরুগুরু বুক ।
বিছানাটির একটি পাশে ঘুমিয়ে আছে খোকা,
মায়ের ‘পরে দৌরাত্মি সে না যায় লেখাজোকা ।
ঘরেতে দুরন্ত ছেলে করে দাপাদাপি–
বাইরেতে মেঘ ডেকে উঠে, সৃষ্টি উঠে কাঁপি ।
মনে পরে মায়ের মুখে শুনেছিলেম গান-
বৃষ্টি পরে টাপুর টুপুর, নদে এল বান ।
মনে পরে সুয়োরাণী দুয়োরাণীর কথা,
মনে পরে অভিমানী কঙ্কাবতীর ব্যথা ।
মনে পরে ঘরের কোণে মিটিমিটি আলো,
চারি দিকের দেয়াল জুড়ে ছায়া কালো কালো ।
বাইরে কেবল জলের শব্দ ঝু–প্ ঝু–প্ ঝু প
দস্যি ছেলে গল্প শোনে, একেবারে চুপ ।
তারি সঙ্গে মনে পরে মেঘলা দিনের গান–
বৃষ্টি পরে টাপুর টুপুর, নদে এল বান ।।
কবে বৃষ্টি পড়েছিল, বান এল সে কোথা–
শিব ঠাকুরের বিয়ে হল কবেকার সে কথা!
সেদিনও কি এমনি তরো মেঘের ঘটাখানা!
থেকে থেকে বাজ-বিজুলি দিচ্ছিল কি হানা!
তিন কন্যে বিয়ে করে কী হল তার শেষে!
না জানি কোন্ নদীর ধারে, না জানি কোন্ দেশে,
কোন্ ছেলেরে ঘুম পাড়াতে কে গাহিল গান–
বৃষ্টি পরে টাপুর টুপুর, নদে এল বান ।।